যুগবার্তা ওয়েব ডেস্ক: পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে তামিলনাড়ুতে (Tamilnadu)। শনিবার রাতে খবর পাওয়া গিয়েছিল, সে রাজ্যের কারুর জেলায় অভিনেতা বিজয়ের (vijay Thalapati) জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৬ জন মহিলা ও ৮ জন শিশু। রবিবার ভোরে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন (M K Stalin) জানান, ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। ইতিমধ্যেই পুরো বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। তাঁর জনসভায় ওই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন অভিনেতাও।
জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর ওরফে বিজয় ওরফে থলপতি বিজয় চলচিত্র জগৎ থেকে সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতির আঙিনায় পা দিয়েছেন। তৈরি করেছেন নতুন দল তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম (টিভিকে)। শনিবার ওই দলের জনসভা ছিল চেন্নাই থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে করুরে। মুখ্য বক্তা ছিলেন বিজয়ই। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুরে। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় সাত ঘণ্টা দেরিতে সভাস্থলে পৌঁছন বিজয়। তত ক্ষণে ভিড় মাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি ভিড় এবং জনসভায় বিজয়ের দেরি করে আসাকেই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য দায়ী করেছে পুলিশ। বিভিন্ন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ৩০ হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিনেতা তথা রাজনীতিককে দেখতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় দ্বিগুণ মানুষ। সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটে।
তামিলনাড়ুর কারুরের ওই জনসভায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। অনেকেই গরমে অসুস্থও হয়ে পড়েন। জ্ঞান হারান কেউ কেউ। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, পদপিষ্টের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকটি শিশুও রয়েছে বলে খবর। অসুস্থ অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা ডেভিডসন দেবাশিবর্থম জানিয়েছেন, শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত অন্তত ৫০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তামিলনাড়ু পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি জি ভেঙ্কটরমন জানিয়েছেন, অভিনেতা-রাজনীতিবিদ বিজয়ের জনসভায় পৌঁছোতে সাত ঘণ্টা দেরি হওয়ায় সমর্থকদের ভিড় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। টিভিকে পার্টি তাদের এক্স হ্যান্ডলে ঘোষণা করেছিল যে, দুপুর ১২টার মধ্যে সভাস্থলে পৌঁছোবেন বিজয়। তবে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল বিকেল ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। ভেঙ্কটরমনের কথায়, ‘‘বিকাল ৩টে থেকে রাত ১০টার মধ্যে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল সভার। টিভিকে এক্স হ্যান্ডলে বলেছিল যে, বিজয় ১২টায় আসবেন। ফলে সকাল ১১টা থেকে জনতা আসতে শুরু করে সভাস্থলে। অন্য দিক, বিজয় পৌঁছোন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। প্রচণ্ড রোদের কারণে লোক জন পর্যাপ্ত খাবার এবং জল ছাড়াই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’’
নায়ককে আরও কাছ থেকে দেখার বাসনায় অনেকে প্রচার-গাড়ির দিকে আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মঞ্চ থেকেই ভিড়ের উদ্দেশে বিজয় বক্তৃতা করতে শুরু করার পর দর্শকদের মধ্যে আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। জনতার উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা ক্রমেই বাড়ছিল।এমন সময় ভিড়ের মাঝে কিছু একটা লক্ষ করেন বিজয়। তাঁর দেহরক্ষী এবং সঙ্গীদের কাছে জলের বোতল চাইতে দেখা যায়। তার পরই সেই বোতল ভিড়ের মাঝে ছুড়ে দেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, প্রচণ্ড গরম আর ভিড়ের চাপে কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখেই তিনি জলের বোতল ছুড়ে দিয়েছিলেন। তবে একটি নয়, পর পর বেশ কয়েকটি জলের বোতল ছুড়ে দেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, বিজয় জলের বোতল ছোড়ার কিছু পরেই বিপত্তি ঘটে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ভিড়ের চাপ আরও বাড়তেই ঠেলাঠেলি আর ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। মুহূর্তে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার মধ্যেই অনেকে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান। আর তার পরই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। যদিও ভেঙ্কটরমন এখনও স্পষ্ট করে জানাননি যে, ঠিক কী কারণে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়েছে তা এত তাড়াতাড়ি বলা সম্ভব নয়।’’
শনিবার মধ্যরাতেই আহতদের সঙ্গে দেখা করতে কারুরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে যান মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন । আহতদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্ট্যালিন জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু সরকার মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ লক্ষ টাকা দেবে। আহতদের পরিবার পিছু দেওয়া হবে এক লক্ষ টাকা। স্ট্যালিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অরুণা জগদীশনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা করেছেন। পুলিশের ত্রুটি ছিল না ভিড় বাড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে জনসভায় দেরিতে এসেছিলেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ বিজয়? তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। এই প্রসঙ্গে স্ট্যালিন বলেন, “তদন্তে সত্য উঠে আসবে। আমি রাজনৈতিক উদ্দেশে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। সত্য প্রকাশ্যে আসার পরেই কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।”
এই প্রসঙ্গে শোকপ্রকাশ করে বিজয় সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “এই পদপিষ্টের ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুর্ঘটনায় আমি এতটাই শোকস্তব্ধ যে ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আমি মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”এর আগেও তাঁর একটি জনসভায় উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছিল। আদালতও আগে এই ধরনের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। উল্লেখ্য, শনিবারের বিজয়ের জনসভায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক সমাবেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে