যুগবার্তা ওয়েব ডেস্কঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তন এসেছে স্বাস্থ্য পরিষেবায়। কোভিড সময়কাল স্বাস্থ্য পরিষেবার ভিত্তিকে নড়িয়ে দিয়ে গেছে। আগে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে বিষয়গুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত না, সেগুলিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রোগীর খাওয়া দাওয়া কেমন হবে, সাধারণ মানুষ কতটা পরিমানে খাবার খাবেন, চোখে দেখার অসুবিধা হলে বা কানে শোনার অসুবিধা হলে কী করতে হবে বা দূরবর্তী রোগীকে দেখার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করতে পেরেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে বেশ কিছু বিষয় পড়ে নেওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম-
অপ্টোমেট্রি
চোখ এবং দৃষ্টি সংক্রান্ত প্রাথমিক চিকিৎসা করে থাকেন অপ্টোমেট্রিস্টরা। এছাড়াও চোখের এবং দেখার ক্ষমতার বিশদ যত্ন যেমন চশমা দেওয়া, চোখের রোগ নির্নয় এবং তার চিকিৎসার ব্যাবস্থা এবং সামগ্রিক দৃষ্টির অবস্থার উন্নতি ঘটানোর কাজ করেন অপ্টোমেট্রিস্টরা। প্রাইভেট প্র্যাকটিস, গ্রুপ প্র্যাকটিস অর্থাৎ এমবিবিএস, এমডি, বিডি ডাক্তারদের সঙ্গে যুক্ত থেকে চক্ষু হাসপাতালে বা অন্য হাসপাতালে চক্ষু বিভাগে বা চক্ষু পরীক্ষাকেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। কন্ট্যাক্ট লেন্স বা অপথ্যালমিক লেন্স শিল্পে পেশাদার কর্পোরেট ম্যানেজার হিসাবে, রিটেল অপটিক্যাল চেন বিজনেসগুলির শোরুম ম্যানেজর রূপে, উদ্যোগপতি হিসেবে, ভিশন থেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ, স্পোর্টস ভিশন স্পেশালিস্ট হিসাবে কাজের চাহিদা আছে।
যোগ্যতাঃ উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষার পর মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজির সেট পরীক্ষা দিয়ে অপ্টোমেট্রি বা ভিশন সায়েন্স নিয়ে পড়তে হয়। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজির স্বীকৃতি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি পড়িয়ে থাকে। এই ধরনের অকরেকটি কোর্স ব্যাচেলর অব ভিশন সায়েন্স অ্যান্ড অপ্টোমেট্রি। পড়ে নেওয়া যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের অধীন প্রতিষ্ঠান থেকে।
বিএসসি ইন টেলিমেডিসিন অ্যান্ড ডিজিটাল হেলথ্
করোনা কালে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এই টেলিমেডিসিন। যখন কেউ ঘরে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তখনই ফোন করে বা ভিডিও কল করে ডাক্তারদের সুপরামর্শ পাওয়া গেছে। এই ধরনের সুযোগ বিদেশ থেকেও পাওয়া যায় টেলিমেডিনের মাধ্যমে। হেলথ কেয়ার সিস্টেমেকে ডিজিটাল করা হয়েছে এইভাবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৌলনা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বিষয়টি নিয়ে ৩ বছরের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স করে নেওয়া যায়। পড়া শেষে কাজ করা যায় – এন্ট্রি লেভেল ডিজিটাল প্রোডাক্ট এক্সিকিউটিভ, অ্যাসোসিয়েট মেডিকেল রাইটার, ডিজিটাল হেল্থ ডেটা অ্যানালিসিস, আপারেশন এক্সিকিউটিভ, ডিজিটাল হেলথ এডুকেটর হিসাবে।
ডিপ্লোমা ইন নিউট্রিশন অ্যান্ড হেলথ্ এডুকেশন
কোন নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠীর পুষ্টি কেমন হওয়া দরকার এবং তার জন্য কেমন ধরনের খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন তার ধারনা দেয় এই বিষয়টি। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এই ডিপ্লোমা কোর্সটি করা যায়। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এই কোর্সে ভর্তি হতে হবে। কাজের সুযোগ রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি সেক্টরে নিউট্রিশনিস্ট বা হেলথ্ এডুকেটর হিসাবে। নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স নিট্রিশনিস্ট এবং ডায়াটেটিস্টরা কাজের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা। বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর খাদ্যাভাষ সম্পর্কে জানা যায় নিউট্রিশনিস্টদের কাছ থেকে। অন্যদিকে রোগীদের খাবারের তালিকায় কী ধরনের খাবার রাখলে সঠিক পুষ্টি পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন হয় ডায়াটেটিস্টদের। তিন বছরের নিউট্রিশনে বি এসসি করা যায়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নিউট্রিশন বা বায়োলজি অথবা দুটো বিষয়ই থাকতে হবে। এছাড়া ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, কম্পিউটার সায়েন্স এবং স্ট্যাটিসটিক্স থাকতে হবে। আবার পড়া যায় হোম সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশনে বি এসসি। ভরতির যোগ্যতা প্রয়োজন নিউট্রিশন-কেমিস্ট্রি বা ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি অথবা কেমিস্ট্রি –বায়োসায়েন্স।
এছাড়াও পড়া যায় এম এসসি ইন অ্যাপ্লায়েড নিউট্রিশন, এম এসসি ইন নিউট্রিশন। এই বিষয়গুলি পড়ার জন্য ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন, ডায়াটেটিক্স, ফুডসায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি, ফিজিওলজি, ফুড টেকনোলজি, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স বিষয়ে বি এসসি করা থাকতে হবে। পড়া যায় ডিপ্লোমা ইন ডায়াটেটিক্স। ভরতির জন্য ফিজিওলজি, কেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল ডায়াটেটিক্স, ফুড নিউট্রিশন, নার্সিং, এমবিবিএস বা হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি থাকতে হবে। এছাড়া ফুড অ্যান্ড ডায়াটেশিয়ানের উপর ভোকেশনাল কোর্স করানো হয়। রয়েছে এম এসসি ইন নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স এবং ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন কলেজ থেকে কোর্সগুলি করা যায়।
নিউট্রিশন নিয়ে পড়ার পর সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। কাজের ধরন অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ডায়াটেশিয়ান, কমিউনিটি ডায়াটেশিয়ান, ম্যানেজমেন্ট ডায়াটেশিয়ান এর মতো ভাগগুলি রয়েছে। অডিওলজি অ্যান্ড স্পিচথেরাপি কানে শোনা বা সেই সংক্রান্ত কোনও অসুবিধ হলে বা কানের ভিতরের অঙ্গের কারণে যে ভারসাম্য রক্ষা হয় তার কোনও অসুবিধা হলে অডিওলজিস্ট সাহায্য করে থাকেন। সাধারণত এধরনের অসুবিধা হলে আমরা ইএনটি স্পেশালিস্টদের কাছে যাই। কিন্তু এক্ষত্রে অডিোলজিস্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কানে শোনার অসুবিধা হলে কথা বলতে পারার সমস্যাও তৈরি হয় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। আর এই অসুবিধায় সাহায্য করার জন্য রয়েছেন স্পিচথেরাপিষ্ট। হেয়ারিং এইড লাগবে কি না সেটাও জানিয়ে দিতে পারেন একজন স্পিচথেরাপিস্ট। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ্ সায়েন্সের অধীন ব্যাচেলর ডিগ্রি অব অডিওলজি অ্যান্ড স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজি নিয়ে পড়া যায়। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, ইংলিশ এবং একটি ফিফথ পেপার নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পাশ করতে হয়। ভর্তির জন্য এন্ট্রান্স টেস্ট দিতে হয়। কাজের সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে। নিজস্ব ক্লিনিকও খোলা যায়। বেশ কিছু স্কুলও আছে যেখানে কথা বলতে না পারা শিশুদের কথা শেখানোর তালিম দেওয়া হয়, সেখানেও কাজের সুযোগ রয়েছে। ওল্ড এজ হোমে বয়স্ক মানুষদের জন্য অডিওলজিস্টদের চাহিদা রয়েছে।
সাইকোলজি
লক ডাউন এবং তার পরবর্তী সময় অতিবাহিত হয়েছে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন, কম্পিউটার নিয়ে।বাস্তবের সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক অনেকটা কমে এসেছিল। কাজ হারিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। কাজের বাজারে আসে মন্দা। আর্থিক দিকে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। আর এর থেকে শুরু হয় নানা মানসিক সমস্যা। ফ্রাসট্রেশন, ডিপ্রেশনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। করোনা পরবর্তী কালে পৃথিবী অনেকটা স্বাভাবিক হলেও দেখা যাচ্ছে মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতা কমে গিয়েছে। এধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছেন চিকিৎসকের। এধরনের সমস্যা সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং এ অনেকটা সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়। এরাজ্য থেকে বিষয়টি নিয়ে বিএ বা বিসেসি করার সুযোগ রয়েছে। যে কোনও শাখায় পড়ার পর সাইকোলজি নিয়ে পড়া যায়। অনার্স পাশ করে পিওর সাইকোলজি বা অ্যাপ্ল্যায়েড সাইকোলজি হিসাবে মাস্টার ডিগ্রি করা যায়। এম ফিল করার সুযোগও রয়েছে। সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং নিয়ে পিজি ডিপ্লোমা করে নেওয়া যায়। সাইকোলজি, সোসিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন, ফিলোজফি, ফিজিওলজি বা অ্যানথ্রোপলজি-তে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট বা অনার্স গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। মেডিক্যাল সায়েন্সে ডিগ্রি থাকলেও আবেদন করা যায়। ছবিঃ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
