যুগবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা হরভজন সিং নন। সকলকে টপকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি হলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন ক্রিকেটার মিঠুন মানহাস। রঞ্জি খেললেও তিনি কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি। জম্মুতে জন্ম হলেও তিনি যে ১৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, তার অধিকাংশই দিল্লির হয়ে। ভারতীয় বোর্ডের সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা সাংবাদিকদের জানান, ‘‘পরের টার্মের জন্য নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার মিঠুন মানহাস সভাপতি হচ্ছেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।‘ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রজার বিনির পর মানহাসের ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে বসাটা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো ঘটনা।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে তাদের ‘হাতের পুতুল’ কাউকেই বোর্ডের শীর্ষ পদে বসাবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। ফুটবল-সহ বাকি অধিকাংশ খেলাতেই বিজেপি ‘পুতুল’ লোক বসিয়েছে বলেই মনে করা হয়। মানহাসও যে সেই পথেই হাঁটবেন, তা এক রকম স্পষ্ট।
১৯৯৭/৯৮ মরসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মানহাসের। ১৭ বছর ধরে তিনি দিল্লির মিডল অর্ডারে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার ছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়, সচিন তেন্ডুলকর, ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যুগে তাঁর পক্ষে ভারতীয় দলে জায়গা করা কঠিন ছিল। তিনি অধিনায়ক হিসাবে দিল্লিকে ২০০৭-০৮ মরসুমে রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। সেই বছর ৫৭.৫৬ গড়ে ৯২১ রান করেছিলেন। বিরাট কোহলিও তাঁর নেতৃত্বে রঞ্জি খেলেছেন। ডানহাতি ব্যাটার মানহাস অফ-স্পিন বোলিংও করতেন। ১৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৭টি শতরান, ৪৯টি অর্ধশতরান-সহ ৪৫.৮২ গড়ে ৯,৭১৪ রান করেছেন। পাশাপাশি ৪০টি উইকেটও রয়েছে। তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, পুণে ওয়ারিয়র্স এবং চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএলে খেলেছেন। ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলে দিল্লি তাঁকে নিলামে কেনে। ২০১১ সালে তাঁকে নেয় পুণে। ২০১৪ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই তাঁকে কিনে নেয়। আইপিএলে ৫৫টি ম্যাচে ২২.৩৪ গড়ে ৫১৪ রান করেন তিনি। ২০১৭ সালে মানহাস পঞ্জাব কিংসের সহকারি কোচ হন। এর পর বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা হন। দু’বছর সেই পদে থাকার পর তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সহকারি কোচ হন। বর্তমানে তিনি গুজরাট টাইটান্সের সহকারি কোচের পদে রয়েছেন।
ঘটনাচক্রে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়িতে একটি বৈঠকে সভাপতি এবং বোর্ডের অন্য পদের দৌড়ে থাকা সকলকেই আসতে বলা হয়। উপস্থিত ছিলেন বোর্ড সচিব দেবজিৎ শইকীয়া, যুগ্ম সচিব রোহন দেশাই, কোষাধ্যক্ষ প্রভতেজ সিংহ ভাটিয়া, সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা এবং আইপিএল কমিশনার অরুণ সিংহ ধুমল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বোর্ড সচিব সৌরাষ্ট্রের নিরঞ্জন শাহ এবং তামিলনাড়ুর কাশী বিশ্বনাথনের মতো সিনিয়র কর্তারা। জানা যাচ্ছে, সেখানেই মানহাসের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। সচিব পদে থাকছেন দেবজিৎ শইকীয়া। সহ-সভাপতি এবং যুগ্ম সচিব যথাক্রমে রাজীব শুক্লা এবং প্রভতেজ সিংহ ভাটিয়া। সভাপতির দৌড়ে যাঁর নাম সকলের আগে ছিল, সেই কর্নাটকের রঘুরাম ভাট বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন। আইপিএলের চেয়ারম্যান থাকছেন অরুণ ধুমল। অ্যাপেক্স কাউন্সিলে থাকছেন জয়দেব শাহ। আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলে জায়গা পেয়েছেন মামন মজুমদার।
৪৫ বছরের মানহাসের ক্রিকেটে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা যে একেবারে শূন্য, তা নয়। তিনি জম্মু ও কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (জেকেসিএ) প্রশাসনিক পদে ছিলেন এবং বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভাতেও রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে জম্মুর মানহাসের বোর্ড সভাপতি হওয়াটাই সবচেয়ে বড় চমক।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে