যুগবার্তা বিনোদন ডেস্কঃ মাস দুয়েক ধরেই চর্চায় মমতাশঙ্কর। সৌজন্যে, তাঁর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য। অতিসম্প্রতি এক প্রথম সারির বাংলা চ্যানেলে নাচের প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ঋতুস্রাব, ধর্ষণ, শিশুর পরিচর্যা প্রসঙ্গে নিজস্ব মত প্রকাশ করেন নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী। তারপর থেকেই সমাজমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এবার কি সেই সুরে সুর মেলালেন খোদ মমতাশঙ্করের ভাইঝি শ্রীনন্দাশঙ্কর? সত্যজিৎ রায়- মৃণাল সেনের পছন্দের অভিনেত্রীকে আধুনিকা নন বলেও কটাক্ষ শুনতে হয়। তৈরি হয় নানা মিম। সমাজমাধ্যমে বর্ষীয়ান নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় সহ অনেকেই। আবার সঞ্চালিকা সুদীপা মুখোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজন মমতাশঙ্করের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। শনিবার থেকে সেই চর্চায় যোগ দিয়েছেন শ্রীনন্দা। সমাজমাধ্যমে শনি এবং রবিবার পর পর দু’টি পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে অবশ্য একবারও মমতাশঙ্করের নাম নেননি । কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধা হয়নি নেটিজেনদের।
বিতর্কের শুরু মমতাশঙ্করের দেওয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে। ধর্ষণ নিয়ে বলতে গিয়ে কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনও নারী যদি অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরেন তা হলে তাঁকে দেখে কোনও বিকৃতকামের লালসা জাগতেই পারে। সে ওই লোভ চরিতার্থ করতে পারে অন্য নারীর উপরে। তাই প্রত্যেক মেয়েরই উচিত পোশাকে শালীনতা বজায় রাখা। একই ভাবে ছোটদের ভাল-খারাপ স্পর্শ শেখানো নিয়েও নিজের মতপ্রকাশ করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। মমতাশঙ্কর মনে করেন, ছোটদের ‘গুড টাচ’, ‘ব্যাড টাচ’ শেখানোর প্রয়োজন নেই। তাঁরা কিন্তু ছোটবেলায় এ রকম কিছুই শেখেননি। বদলে বাড়ির বড়দের, বিশেষ করে শিশুর মা-বাবাকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।
মমতাশঙ্করের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই নাম না করে পিসিকে বিঁধেছেন ভাইজি শ্রীনন্দাশঙ্কর। রবিবার সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “যাঁরা সব কিছুতেই মহিলাদের দোষ দেন বা ধর্ষকের মানসিকতার প্রতি সহানুভূতি দেখান, তাঁদের সম্মান আমার দরকার নেই।” শিশুদের ‘গুড টাচ’, ‘ব্যাড টাচ’ না শেখানো প্রসঙ্গে তাঁর আফসোস, “যদি ছোটবেলায় এ সব আমরা জানতাম, তা হলে অনেক খারাপ ছোঁয়া আমরা এড়াতে পারতাম।”
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া আর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি ঋতুস্রাব এবং সে সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচার নিয়ে কিছু আপত্তির কথা জানিয়েছেন। সেখানে কথাপ্রসঙ্গে মমতাশঙ্কর বলেন, “স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে লাল রং ঢেলে বোঝানোর কোনও প্রয়োজন আছে ঋতুস্রাব কী বা কেমন?” তিনি এ-ও জানিয়েছেন, নিজের ছেলেদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি পারবেন না। ঋতুস্রাব নিয়ে এই ‘ট্যাবু’ যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। যতই নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে কথা হোক, এখনও বিশেষ দিনে ঋতুমতীরা পুজোর ঘরে বা মন্দিরে পা রাখতে পারেন না। প্রত্যন্ত গ্রামে রান্নাঘরেও ঢুকতে পারেন না। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার পর্যন্ত জানেন না অনেকে! আজকের আধুনিক যুগেও নারীকে যখন তার ঋতুস্রাবের মতো শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য লড়তে হয়, সেখানে মমতাশঙ্করের এই বক্তব্য নতুন করে সমালোচনার জন্ম দেয়। যা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে নেটপাড়া।
শনিবার সমাজমাধ্যমে শ্রীনন্দার প্রথম পোস্টে কতকটা এই বক্তব্যের বিরোধিতার আঁচ পাওয়া যায়। শঙ্কর পারিবারের ঐতিহ্য মেনে নাচকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন শ্রীনন্দা।পাশাপাশি, মা তনুশ্রীশঙ্কর বা পিসি মমতাশঙ্করের মতো অভিনয়ও করেন।
শনিবারের পোস্টে পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে শ্রীনন্দা লেখেন, “বংশগৌরব আর প্রতিভা একজন মানুষকে চেনায় না— তার চিন্তা আর বিশ্বাসই আসল।” তিনি মনে করেন, অনেক তারকাই সময়ের সঙ্গে চলতে শেখেননি! তাই তাঁরা বিরক্ত আর তিক্ত হয়ে পড়েন। শ্রীনন্দার এই বক্তব্য মুহূর্তে ভাইরাল হয়। অনেকেই তাঁকে সমর্থন জানান। তারপর রবিবার ফের ধর্ষণ ও শিশুদের ‘গুড টাচ’ ‘ব্যাড টাচ’ শেখানো প্রসঙ্গে পোস্ট করতেই, শ্রীনন্দার নিশানায় আসলে কে তা পরিষ্কার হয়ে যায়! যদিও এই প্রসঙ্গে শ্রীনন্দা, মমতাশঙ্কর বা শঙ্কর পরিবারের কেউই মুখ খোলেননি। তবে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শঙ্কর পরিবারের বিবাদ কি প্রকাশ্যে!
ছবিঃ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে