যুগবার্তা ওয়েব ডেস্কঃ চলতি বছরের অক্টোবর নভেম্বর মাস নাগাদ বিহার বিধানসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে ভোটার তালিকার ‘এসআইআর’ করতে গিয়ে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, বিহার জুড়ে ৫৬ লক্ষ লোকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা ‘এসআইআর’-এর পরে এই নাম বাদ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। এই সঙ্গে জানানো হয়েছিল, সেই রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ ভোটারের কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। খসড়া ভোটার তালিকায় ২০ লক্ষ মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ এখন অন্য রাজ্যে বাস করছেন এবং প্রায় ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক স্থানে আছে। বর্তমান তালিকায় থাকা আরও ১ লক্ষ লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এই নামগুলিও বাদ দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। বিহারে ৭.১৭ কোটি মানুষের গণনা ফর্ম গ্রহণ এবং ডিজিটাইজ করা হয়েছে। এদিকে, আরও প্রায় ১৫ লক্ষ ভোটার যাচাইকরণ ফর্ম ফেরত দেননি। ফলে ভোট শুরু হওয়ার সময় তাঁদেরও তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত বিরোধীরা। বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনী নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। সূত্রের খবর, বিরোধীদের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশনের কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদের দুই কক্ষেই নির্বাচন কমিশনের এই সংশোধনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। সংসদের বাইরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডি-সহ ‘ইন্ডিয়া’র প্রায় সব দলের সদস্যই সংসদ চত্বরে এসআইআর-এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। বিরোধীদের হাতে ছিল ‘এসআইআর: গণতন্ত্রের উপর আঘাত’ লেখা পোস্টার। এক সময় বিক্ষোভে যোগ দেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সোনিয়া গান্ধী। বিক্ষোভের জেরে প্রথমে দুপুর ২টো পর্যন্ত লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। তারপর অধিবেশন শুরু হলেও হট্টগোল চলতে থাকে। রাজ্যসভা এবং লোকসভার অধিবেশন শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “এটা খুবই গুরুতর বিষয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশনের মতো কাজ করছে না। এখন আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে, নির্বাচন কমিশন কর্নাটকের একটি আসনে কারচুপি করতে দিয়েছে।” ভোটার তালিকা থেকে বহু বৈধ ভোটারের নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন রায়বেরেলীর কংগ্রেস সাংসদ।
বিরোধী বিক্ষোভে শামিল হওয়ার পাশাপাশি বাংলা এবং বাঙালি প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেন জুন মালিয়া সহ তৃণমূলের একাধিক সাংসদ। রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ লেখেন, “বাংলাভাষীদের ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের প্রথম ধাপ এটি। বাংলা-বিরোধী নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং বাংলা বিদ্বেষী পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি বাংলা আর বাংলাভাষীদের নিশানা করলেও সফল হবে না।”
বিহারের এই ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এই সপ্তাহে সেই মামলার শুনানি রয়েছে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে। তার আগে নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এমনকী, কমিশন বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছে বলেও দাবি বিরোধীদের। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা। বেছে বেছে ভোটারদের বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেজস্বী বলেন, ‘ভোট বয়কটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আমরা দেখব জনগণ কী চায় এবং সবার মতামত কী? সবকিছুতেই যখন অসৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে… তা হলে নির্বাচন করার কী মানে হয়?’ ভোট বয়কটের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান লালু-পুত্র। এই অবস্থায় আরজেডি-সহ অন্য বিরোধী দল ভোট বয়কটের পথে হাঁটলে তা নজিরবিহীন হবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলে। ছবিঃ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে