যুগবার্তা ওয়েব ডেস্ক: বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে (Ex-army Workers Strike) গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কোর্টের অনুমতি নিয়ে প্রাক্তন সেনাকর্মীরা ধর্নায় বসলেও শর্ত ছিল, কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা ধর্না মঞ্চে থাকতে পারবেন না। ফলে শুভেন্দুর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বিভিন্ন মহলে। পরে তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) দায়ের হয় মামলা। সেই মামলায় শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারীকে সতর্ক করল কলকাতা হাইকোর্ট। ভবিষ্যতে এমন হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ করবে আদালত বলে সাফ জানিয়ে দেন বিচারপতি
ঘটনার শুরু, ভারতীয় সেনা (Indian Army) সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) করা কিছু মন্তব্যে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তৃণমূলের প্রতিবাদ মঞ্চ খোলার বিষয়ে ভারতীয় সেনার কার্যত সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চ খোলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপি’র দিকে আঙুল তুলে মমতা বলেছিলেন, এই কাজ সেনার নয়, বিজেপির (BJP) নির্দেশে করা হয়েছে। সেনাকে ‘ বন্ধু’ বলে অভিহিত করে তিনি এও বলেছিলেন, ঘটনাস্থলে তিনি পৌঁছলে সেনা কর্মীরা পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই মন্তব্যের প্রতিবাদেই প্রাক্তন সেনা কর্মীদের একাংশ ধর্নায় বসেন।
বৃহস্পতিবার সেই ধর্নামঞ্চে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা। মমতাকে দেশবিরোধী ও সেনা বিরোধী আখ্যা দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “সেনা আপনাকে দেখে পালায়নি, আপনি সেনাকে দেখে মেয়ো রোড থেকে পালিয়ে ডোরিনা ক্রসিং গেছেন।” মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ছারপোকার’ সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। ধর্না-মঞ্চে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গেই ছিলেন বিজেপি নেতা তাপস রায়, অর্জুন সিংহসহ দলের উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ প্রমুখ। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। বিজেপির বিরুদ্ধে সেনাকে নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে পাল্টা সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কোর্টের শর্ত অগ্রাহ্য করে কীভাবে ধর্নায় উপস্থিত হলেন শুভেন্দু? যদিও এ নিয়ে বৃহস্পতিবারই সাফাই দিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, “কোনও দলের নেতা হয়ে নয়, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে এখানে এসেছি। উপস্থিত কেউ বিজেপির রাজ্য কমিটির পদাধিকারী নন। বিরোধী দলনেতাও সাংবিধানিক পদ। সুতরাং কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা নিয়ম-কানুন মেনে চলি।”
শেষপর্যন্ত ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হয়ে আদালতের শর্ত ভঙ্গ করেছেন শুভেন্দু, এই অভিযোগেই রাজ্যের তরফে দায়ের হয় মামলা। সেই মামলার রায় দিতে গিয়েই ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ । তিনি বলেন, “আপনারা বলেছিলেন সবাই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের যোগ থাকতেই পারে। আপনাদের আর্মি ইস্যু ছিল অ্যাজেন্ডা। কোনও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা ছিল না। তবে আদালতের সঙ্গে জাগলারি করলে সমস্যা আছে। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের উপর আমার সহানুভূতি আছে। কিন্তু নির্দেশ কেন মানছেন না?” এরপর বিচারপতির হুঁশিয়ারি, “আদালত এই মুহূর্তে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ভবিষ্যতে এমন হলে রং না দেখেই কঠোর পদক্ষেপ নেবে আদালত। সেটা তারা শাসক হোক বা বিরোধী।” স্বাভাবিকভাবে আদালতের নির্দেশে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে