যুগবার্তা ওয়েব ডেস্ক: রাতভোর বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত কলকাতা। সোমবার রাত থেকে আকস্মিক প্রবল বর্ষণে শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। আপাতত সংখ্যাটি ৯। এই পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর কলকাতার সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অফিসযাত্রীদেরও বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “মানুষের জীবন সবার আগে। কাজকর্ম পরে হবে, কিন্তু বিপদের মুখে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, পুলিশ, দমকল ও বিদ্যুৎ দপ্তরের জরুরি টিম ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় কাজ শুরু করেছে। জলমগ্ন রাস্তায় পাম্প বসিয়ে জল নামানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিপর্যস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজও চলছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এত কম সময়ে এত প্রবল বৃষ্টি আগে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরিস্থিতি নজরে রাখছেন। সমস্ত দফতরকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করতে বলা হয়েছে।
এই দুর্যোগের মাঝেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিইএসসি-র ভূমিকায় কার্যত বিরক্ত তিনি। তাঁর কথায়, ‘সিইএসসি-কে অনেকবার বলেছি কলকাতায় ওয়্য়ারগুলো ঠিক করতে। শুনেছি ৭–৮ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই পরিবারগুলোকে সিইএসসি-কে সাহায্য় করতে হবে। তাঁদের একটা করে চাকরি দিতে হবে, আমি স্পষ্ট জানাচ্ছি। যা যা সম্ভব, আমরাও করব। আমরাও ভুগছি, আমাদের ঘর বাড়িও ডুবে গেছে। পুজোর মণ্ডপগুলোর জন্যও খারাপ লাগছে। এটা কি সিইএসসি-র দায়িত্ব নয়? বিদ্যুৎ সিইএসসি দেয়, সরকার নয়। মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা করা তাদেরই কর্তব্য। এখানে ব্যবসা করবে, কিন্তু এখানে আধুনিকীকরণ করবে না? দ্রুত মাঠে নামুক, কাজ শুরু করুক।‘
এই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমি মেয়র, মুখ্য সচিব এবং পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে একটানা যোগাযোগ রাখছি। ফরাক্কায় সঠিকভাবে ড্রেজিং করা হয় না, তাই বৃষ্টি হলেই বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মুম্বই বা দিল্লিতে জল জমে। এবারের বৃষ্টিটা একেবারেই অস্বাভাবিক, অনেকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। আমি ২-৩দিন ধরেই সতর্ক করছি। এরকম বৃষ্টি আমরা কখনও দেখিনি। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমি ভীষণ দুঃখিত। আজ স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছি, অফিসযাত্রীদেরও কাজে না যাওয়ার জন্য বলেছি। কালও অফিসে না যাওয়াই ভালো। আবারও বান আসছে, আরও জল জমবে। গঙ্গায় মহালয়া থেকে জোয়ার চলছে। জল যাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই, শেষমেশ সেটা আবার গঙ্গাতেই বার করতে হবে। বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা জলে চারপাশ ভরে আছে। আমি বেসরকারি কর্মীদেরও কাজে না যেতে অনুরোধ করছি—দুর্যোগ সবার উপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে। উপরন্তু কেন্দ্র জিএসটি-র টাকা কেটে নিয়েছে, আমাদের সব ফান্ড এখন এই দুর্যোগ সামলাতেই যাচ্ছে।”
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে